পাবনার সাঁথিয়ায় মতিন হত্যা মামলার একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। এ মামলার বাদী চাচাতো ভাই নাগডেমড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদই এখন আসামি। পাবনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহতের বড় বোন বুলবুলি খাতুন। পাবনা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী-০৫ আদালতে এ মামলা করেন যার মোকদ্দমা নং-পিটিশন-১৪৯/২০২২(সাঁথিয়া)। তারিখ ২৬-০৯-২০২২ইং। মামলায় আরো আসামি করা হয়েছে হারুন অর রশিদের ছোট ভাই এবং মতিন হত্যা মামলার প্রধান ও প্রত্যক্ষ সাক্ষী জুয়েল হোসেনসহ ১০-১৫ জন অজ্ঞাতনামাকে। এ মামলার আসামি হারুন পলাতক এবং জুয়েল কারাগারে রয়েছেন। রহস্য উদঘাটনে আসামি হারুকে খুঁজছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী। অন্যদিকে ওই খুনের ঘটনায় হারুনের করা মিথ্যা মামলায় ২ মাস ২৫ দিন জেল হাজত খাটলেন নাগডেমড়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজ।
নাগডেমড়া ইউনিয়নের পুঠিপাড়া গ্রামের মতিনকে (৫০) চলতি বছরের ৪ জুন কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় সঙ্গে থাকা তার চাচাতো ভাই জুয়েলও (৪০) আহত হন। এরপর দিন অর্থাৎ গত ৫ জুন হারুন বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজকে প্রধান আসামি করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ওই দিন দুপুরে হাফিজসহ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। ৩০ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে স্থায়ী জামিন পান হাফিজ। স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হাফিজের কাছে হারুন পরাজিত হওয়ার পর থেকে দুজনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। অপরদিকে হাফিজের স্ত্রী গত ৭ জুন সাঁথিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবাদ জানিয়ে মামলার নিরপেক্ষ তদন্তে সিআইডি ও র্যাবের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মামলাটি গত ২৭ জুলাই/২২ইং থানা পুলিশ থেকে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। মামলার সুত্র ধরে তদন্তে নামে সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) পায়েল হোসেনের নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম। মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে সন্দেহভাজন আসামি উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের মটকা গ্রামের বেলাল শেখ, ছেছানিয়া গ্রামের আনিসকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের তথ্যানুযায়ী গত ১৪ সেপ্টেম্বর জুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাদী বুলবুলি খাতুন বলেন, হারুন ও জুয়েল পরিকল্পিতভাবে ভাড়াটে খুনি দিয়ে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পায়েল হোসেন বলেন, এ পর্যন্ত বর্তমান মামলার মূল আসামি জুয়েলসহ মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৪ জুন শনিবার জুয়েল দাওয়াত খাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে মতিনকে ডেকে নিয়ে যায়। রাত পৌনে ৯টার দিকে পাবনার সাঁথিয়া পৌর সদরের পুটিপাড়া গ্রামের ক্যানেলের পাশে মহির উদ্দিন ওরফে মহেরের ছেলে আঃ মতিন (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বর্তমানে মামলাটি সিআইডতে তদন্তাধীন রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের ইনস্পেক্টর নিঃ পায়েল হোসেন। তিনি বলেন, হত্যা কান্ডেরসাথে জুয়েল, বাদী হারুনসহ আরও ৭/৮ জন রয়েছে। যেহেতু তদন্ত এখনও চলমান সেহেতু বেশী কিছু বলা যাবে না। তবে যারাই জড়িত থাকুক সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
বিনা দোষে জেল হাজত খাটার বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজুর রহামান হাফিজ বলেন, তারা নিজেরাই খুন করে আমাকে মিথ্যা মামলার প্রধান আসামী বানিয়ে ২ মাস ২৫ দিন জেল হাজত খাটিয়েছে। এতে আমার অবশ্যই সামাজিকভাবে মান ক্ষুন্ন হয়েছে। শুধু তাই নয়, আমার এলাকার নিরীহ জনগণকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। এর জন্যও তার আইনের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমি আইনকে শ্রদ্ধা করি। তাই আমি আইনের মাধ্যমে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে
মতিন হত্যা মামলার বাদীই এখন আসামি
বার্তা সরণি প্রতিবেদন
বার্তা সরণি প্রতিবেদন
| অনলাইন সংস্করণ