রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪

  ঢাকা, বাংলাদেশ  |  আজকের পত্রিকা  |  ই-পেপার  |  আর্কাইভ   |  কনভার্টার  |   অ্যাপস  |  বেটা ভার্সন

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪

  |  ঢাকা, বাংলাদেশ  |  আজকের পত্রিকা  |  ই-পেপার  |  আর্কাইভ   |   কনভার্টার  |   অ্যাপস  |  বেটা ভার্সন

ছুটির দিনেও আশানুরূপ বিক্রি নেই

মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে গরুর মাংস

বার্তা সরণি প্রতিবেদন

বার্তা সরণি প্রতিবেদন

| অনলাইন সংস্করণ

দুই বছর আগেও এক কেজি গরুর মাংস পাওয়া যেত ৫০০ টাকায়। বর্তমানে সেই মাংস কিনতে গুনতে হচ্ছে ৭০০ টাকা। দেশের বেশির ভাগ মানুষের প্রতিদিনের আয় এর চেয়ে কম। ফলে এসব মানুষের পক্ষে আর গরুর মাংস কেনা সম্ভব নয়।

রাজধানীর মহাখালী এলাকার খুচরা বাজারে দীর্ঘ দিন ধরে গরুর মাংস বিক্রি করেন জাহিদুর রহমান। এক সময় সারাদিনই প্রচুর ভিড় থাকতো তার দোকানে। তবে আগের সেই চিত্র এখন আর নে বলে জানালেন জাহিদুর। তার মতে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে মানুষ এখন অনেক নিত্যপণ্যই বুঝে-শুনে কেনেন ক্রেতারা। তারওপর গুরুর মাংসের দাম কিছুটা বাড়তি হওয়ায় বিক্রিতে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রোববার সরকারি ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও তার দোকানে গরুর মাংস আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে গরুর মাংসের ক্রেতা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে এমনটি জানিয়ে মাংস বিক্রেতা জাহিদুর রহমান বলেন, বাড়তি দামের কারণে আগের মতো বেশি মাংস আর ক্রেতারা কেনে না। আজ একটা ছুটির দিন, আগে কোনো ছুটির দিনে মাংস বিক্রি করে কূল পেতাম না। একের পর এক ক্রেতা থাকতো, মানুষ লাইন ধরে মাংস কিনতো। কারণ ঢাকা শহরে ছুটির দিনে মানুষ নিজ বাসায় থাকে, আত্মীয়-স্বজন আসে, ফলে ভালো মন্দ খায়। কিন্তু মাংসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর সেভাবে আর ক্রেতা পাচ্ছি না। আজ ছুটির দিনেও অলস সময় কাটাতে হচ্ছে দোকানে।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংস ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খাসির মাংস ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। রাজধানীর মালিবাগের একটি গরুর মাংসের দোকানে দরদাম করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবি আব্দুল্লাহ আল ওয়াদুদ নামের একজন। আলাপাকালে তিনি বলেন, ভাই এখন আর কেউ শখ করে খাওয়ার জন্য গরুর মাংস কেনা না। সাধারণ মধ্যম-নিম্ন আয়ের যারা গরুর মাংস কিনে তারা অনেকটা বাধ্য হয়েই কিনে। হয়তো বা তার বাসায় কোনো অনুষ্ঠান নয়তোবা কোনো আত্মীয় স্বজন এসেছে তারা বাড়িতে। এসব কারণে বাধ্য হয়ে গরুর মাংস কিনে তারা। নইলে ৭০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস কিনে খাওয়া সাধারণ মানুষের জন্য একটু কঠিন বিষয়। গত কোরবানি ঈদের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩ বার গরুর মাংস কিনেছি মাত্র। আজ বাসায় আত্মীয় স্বজন এসেছে তাই বাধ্য হয়েই বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে এসেছি।

ঊর্ধ্বগতির বাজার এবং ক্রেতা কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে গুলশান সংলগ্ন বাজারে গরুর মাংস বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি। আগে যেখানে সারা দিনে এক একটি দোকানে পুরো গরুই বিক্রি হয়ে যেত সেখানে এখন সেসব দোকানিরা সারা দিনে অর্ধেক মাংস বিক্রি করতেও কষ্ট হয়ে যায়। কারন দাম বাড়তি থাকায় খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ গরু বা খাসির মাংস কিনে না। আজ সকালের দিকে অল্প কিছু সংখ্যাক মাংস বিক্রি হয়েছে, এরপর থেকে আর বিক্রি নেই ফলে ফাঁকা বসে আছি।

রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার আরেক মাংস বিক্রেতা কাউছার মিয়াও গরুর মাংস বিক্রি কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলেন, শুধু বিক্রি কমেছে এমন নয় এরসঙ্গে অনেক ছোট ব্যবসায়ী অর্থাৎ পাড়া মহল্লায় গরুর মাংস বিক্রেতা ব্যবসার এমন অবস্থা দেখে তার দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। গরুর মাংসের দামের কেন এত ঊর্ধ্বগতি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বাস করবেন কি না তা জানি না, তবে এই ৭০০ টাকা কেজিতেও গরুর মাংস বিক্রি করে আমাদের সেই অর্থে লাভই হয় না। গাবতলী থেকে একটা গরুই কেনা পড়ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি দামে। এছাড়া প্রতিটি গরুতে আছে চাঁদাবাজি। এরপর সেই গরুটা এখানে আনতে হয়, লোকজন লাগে। দোকানেও কমপক্ষে দুইজন করে কর্মচারী লাগে। সব মিলিয়ে গরু কেনা, দোকানে আনাতেই অনেক খরচ পড়ে যায়, দোকান ভাড়াও বাড়তি। এখন প্রতিটি দোকানির দুই একটা করে ফ্রিজ আছে, কারণ বেশিরভাগ দিনই সব মাংস বিক্রি হয় না। ফলে সেই মাংস ফ্রিজে রেখে পরের দিন আবার বিক্রি করতে হয়। আগে যেই ক্রেতা ৪/৫ কেজি করে মাংস কিনেছে, এখন সেই ক্রেতাই কিনে এক কেজি দুই কেজি করে মাংস। বর্তমান বাজারে হাফ কেজিও গরুর মাংস কিনতে আসে ক্রেতারা। তবে খুব প্রয়োজন ছাড়া ক্রেতারা এখন আর গরু বা খাসির মাংস কিনে না, তাই আমাদের দোকানগুলোতে ক্রেতা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

শীত বস্ত্র বিতরণ করলো মোহাম্মদ নাসিম ফাউন্ডেশন

বার্তা সরণি প্রতিবেদক:প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের সাহায্যে শীত নিবারণ করছে পাবনার সাঁথিয়াবাসী। শীতের তীব্রতা অনেকাংশই বেশি এখানে। এছাড়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির...

মেধাবি সিয়ামের পড়ালেখার দায়িত্ব নিলেন মানবিক এমপি জয়

মানবতায় এগিয়ে আসলেন সিরাজগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য ও উত্তরবঙ্গের কৃতি সন্তান প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়। এসএসসি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগ থেকে রাজশাহী বোর্ডে প্রথম...

বঙ্গবন্ধুকে ফিরে না পেলে স্বাধীনতা পূর্ণতা পেতো না : মেয়র তাপস

বার্তা সরণি প্রতিবেদক:ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি ১৯৭২ সালের ১০...

দুই বছর আগেও এক কেজি গরুর মাংস পাওয়া যেত ৫০০ টাকায়। বর্তমানে সেই মাংস কিনতে গুনতে হচ্ছে ৭০০ টাকা। দেশের বেশির ভাগ মানুষের প্রতিদিনের আয় এর চেয়ে কম। ফলে এসব মানুষের পক্ষে আর গরুর মাংস কেনা সম্ভব নয়।

রাজধানীর মহাখালী এলাকার খুচরা বাজারে দীর্ঘ দিন ধরে গরুর মাংস বিক্রি করেন জাহিদুর রহমান। এক সময় সারাদিনই প্রচুর ভিড় থাকতো তার দোকানে। তবে আগের সেই চিত্র এখন আর নে বলে জানালেন জাহিদুর। তার মতে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে মানুষ এখন অনেক নিত্যপণ্যই বুঝে-শুনে কেনেন ক্রেতারা। তারওপর গুরুর মাংসের দাম কিছুটা বাড়তি হওয়ায় বিক্রিতে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রোববার সরকারি ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও তার দোকানে গরুর মাংস আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে গরুর মাংসের ক্রেতা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে এমনটি জানিয়ে মাংস বিক্রেতা জাহিদুর রহমান বলেন, বাড়তি দামের কারণে আগের মতো বেশি মাংস আর ক্রেতারা কেনে না। আজ একটা ছুটির দিন, আগে কোনো ছুটির দিনে মাংস বিক্রি করে কূল পেতাম না। একের পর এক ক্রেতা থাকতো, মানুষ লাইন ধরে মাংস কিনতো। কারণ ঢাকা শহরে ছুটির দিনে মানুষ নিজ বাসায় থাকে, আত্মীয়-স্বজন আসে, ফলে ভালো মন্দ খায়। কিন্তু মাংসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর সেভাবে আর ক্রেতা পাচ্ছি না। আজ ছুটির দিনেও অলস সময় কাটাতে হচ্ছে দোকানে।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংস ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খাসির মাংস ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। রাজধানীর মালিবাগের একটি গরুর মাংসের দোকানে দরদাম করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবি আব্দুল্লাহ আল ওয়াদুদ নামের একজন। আলাপাকালে তিনি বলেন, ভাই এখন আর কেউ শখ করে খাওয়ার জন্য গরুর মাংস কেনা না। সাধারণ মধ্যম-নিম্ন আয়ের যারা গরুর মাংস কিনে তারা অনেকটা বাধ্য হয়েই কিনে। হয়তো বা তার বাসায় কোনো অনুষ্ঠান নয়তোবা কোনো আত্মীয় স্বজন এসেছে তারা বাড়িতে। এসব কারণে বাধ্য হয়ে গরুর মাংস কিনে তারা। নইলে ৭০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস কিনে খাওয়া সাধারণ মানুষের জন্য একটু কঠিন বিষয়। গত কোরবানি ঈদের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩ বার গরুর মাংস কিনেছি মাত্র। আজ বাসায় আত্মীয় স্বজন এসেছে তাই বাধ্য হয়েই বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে এসেছি।

ঊর্ধ্বগতির বাজার এবং ক্রেতা কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে গুলশান সংলগ্ন বাজারে গরুর মাংস বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি। আগে যেখানে সারা দিনে এক একটি দোকানে পুরো গরুই বিক্রি হয়ে যেত সেখানে এখন সেসব দোকানিরা সারা দিনে অর্ধেক মাংস বিক্রি করতেও কষ্ট হয়ে যায়। কারন দাম বাড়তি থাকায় খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ গরু বা খাসির মাংস কিনে না। আজ সকালের দিকে অল্প কিছু সংখ্যাক মাংস বিক্রি হয়েছে, এরপর থেকে আর বিক্রি নেই ফলে ফাঁকা বসে আছি।

রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার আরেক মাংস বিক্রেতা কাউছার মিয়াও গরুর মাংস বিক্রি কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলেন, শুধু বিক্রি কমেছে এমন নয় এরসঙ্গে অনেক ছোট ব্যবসায়ী অর্থাৎ পাড়া মহল্লায় গরুর মাংস বিক্রেতা ব্যবসার এমন অবস্থা দেখে তার দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। গরুর মাংসের দামের কেন এত ঊর্ধ্বগতি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বাস করবেন কি না তা জানি না, তবে এই ৭০০ টাকা কেজিতেও গরুর মাংস বিক্রি করে আমাদের সেই অর্থে লাভই হয় না। গাবতলী থেকে একটা গরুই কেনা পড়ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি দামে। এছাড়া প্রতিটি গরুতে আছে চাঁদাবাজি। এরপর সেই গরুটা এখানে আনতে হয়, লোকজন লাগে। দোকানেও কমপক্ষে দুইজন করে কর্মচারী লাগে। সব মিলিয়ে গরু কেনা, দোকানে আনাতেই অনেক খরচ পড়ে যায়, দোকান ভাড়াও বাড়তি। এখন প্রতিটি দোকানির দুই একটা করে ফ্রিজ আছে, কারণ বেশিরভাগ দিনই সব মাংস বিক্রি হয় না। ফলে সেই মাংস ফ্রিজে রেখে পরের দিন আবার বিক্রি করতে হয়। আগে যেই ক্রেতা ৪/৫ কেজি করে মাংস কিনেছে, এখন সেই ক্রেতাই কিনে এক কেজি দুই কেজি করে মাংস। বর্তমান বাজারে হাফ কেজিও গরুর মাংস কিনতে আসে ক্রেতারা। তবে খুব প্রয়োজন ছাড়া ক্রেতারা এখন আর গরু বা খাসির মাংস কিনে না, তাই আমাদের দোকানগুলোতে ক্রেতা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।