রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪

  ঢাকা, বাংলাদেশ  |  আজকের পত্রিকা  |  ই-পেপার  |  আর্কাইভ   |  কনভার্টার  |   অ্যাপস  |  বেটা ভার্সন

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪

  |  ঢাকা, বাংলাদেশ  |  আজকের পত্রিকা  |  ই-পেপার  |  আর্কাইভ   |   কনভার্টার  |   অ্যাপস  |  বেটা ভার্সন

নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বন্দর উপজেলা আর বিচ্ছিন্ন থাকলো না

তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

বার্তা সরণি প্রতিবেদন

বার্তা সরণি প্রতিবেদন

| অনলাইন সংস্করণ

নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বন্দর উপজেলা আর বিচ্ছিন্ন হয়ে রইল না। দুই জনপদকে আলাদা করে রাখা নদীর ওপর সাড়ে সাত বছরের নির্মাণযজ্ঞ শেষ করে এখন সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করলো তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, যেটির নামকরণ করা হয়েছে সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের নামে। দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষে আজ স্বপ্নের দ্বার খুললো নারায়ণগঞ্জের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার দুপুর ১২টায় তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতু উদ্বোধন করেন। ফলে নৌকা ও ট্রলারে করে নদী পারাপার হওয়ার ভোগান্তি থাকছে না দুই পারের মানুষের।

সেতুপারের বন্দর ফরাজিকান্দা অংশে প্রস্তুত করা হয় মঞ্চ। সেখানে বড় পর্দায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুর অপর পার নারায়ণগঞ্জের অংশকেও সাজানো হয়েছে নানাভাবে।

বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কুদরতে খুদা বলেন, ‘প্রতিদিন নৌকা ও ট্রলারে শহরে আসা-যাওয়া করতে এ অঞ্চলের মানুষের যেমনি ভোগান্তি পোহাতে হয়, তেমনি মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে। তাই সেতুটি উদ্বোধনে উচ্ছ্বসিত বন্দর উপজেলার প্রতিটি মানুষ।’

উপজেলার সাবদি এলাকার বাসিন্দা রুপালী আক্তার বলেন, ‘ভোর থেকে রাত পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা নদীতে অসংখ্য কার্গো জাহাজ, বাল্কহেডসহ নৌযান চলাচল করে। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার হতে হয় যাত্রীদের। প্রায় সময় ঘটে দুর্ঘটনা। ঝুঁকির কারণে নারীরা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে নদী পার হতে চান না। কারণ অনেক ভয় লাগে নদীতে। সেতু হওয়ায় যেমনি ভয় কেটেছে তেমনি পথ সহজ হয়েছে।’

বাগবাড়ী এলাকার বাসিন্দা নাহিন আলম পলক বলেন, ‘বন্দরের মদনগঞ্জ ঘাট থেকে নবীগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত আটটি খেয়া পারাপারের ঘাট রয়েছে। এসব ঘাট দিয়ে সবচেয়ে বেশি পারাপার হন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। সময় বাঁচাতে বেশির ভাগ সময় ঝুঁকি নেন ট্রলারে। সেতু হওয়ার ফলে এখন যানবাহনে করে সহজে সরাসরি নারায়ণগঞ্জে কাজে যেতে পারবে। তিনি বলেন, ‘সব চেয়ে বেশি উপকার হবে রোগীদের। সেতু হওয়ার কারণে দীর্ঘদিনের কষ্ট শেষ হচ্ছে। এটা অনেক আনন্দেন। আমাদের বন্দরবাসীর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’

নারায়ণগঞ্জ পাড়ের নিতাইগঞ্জের শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘ব্রিজ হওয়ার কারণে যাতায়াত সহজ হয়ে গেল। সেতু ব্যবহার করে কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিভিন্ন এলাকার দিকে যেতে সহজ হবে। কাঁচামালসহ বিভিন্ন পাইকারি পণ্য আনা নেয়ায় সময় বাঁচবে।’

সেতুর প্রকল্প পরিচালক শোয়েব আহমেদ জানান, সৌদি আরবের সহযোগিতা নিয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছে সরকার। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ৩৮টি খুঁটি। এর মধ্যে নদীতে রয়েছে পাঁচটি। তিনি বলেন, ‘এখন নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরের মধ্যে সরাসরি সংযোগ হলো। পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট-মহাসড়কে অল্প সময়ে যাতায়াত করা যাবে।’

২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বন্দরের মদনগঞ্জ ও সদরের সৈয়দপুর এলাকায় সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। ১ হাজার ২৩৪ দশমিক ৫০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬০৮ কোটি টাকা ৫৬ লাখ টাকা। ৬ লেনের এই সেতুর চার লেনে দ্রুতগতির যানবাহন এবং দুই লেনে চলবে রিকশা সাইকেল ভ্যানসহ ধীরগতির যানবাহন। দুই পাশের রেলিং ঘেঁষে রয়েছে ফুটপাত। তাই পাড়ি দেয়া যাবে হেঁটেও। এই সেতুর নির্মাণের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের সঙ্গে পদ্মা সেতুর দূরত্ব কমল ৯ কিলোমিটার। বন্দর উপজেলার মদনপুর দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর হয়ে শ্রীনগরের ছনবাড়ী পয়েন্টে দিয়ে যুক্ত হবে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা সুপার এক্সপ্রেসওয়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

শীত বস্ত্র বিতরণ করলো মোহাম্মদ নাসিম ফাউন্ডেশন

বার্তা সরণি প্রতিবেদক:প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের সাহায্যে শীত নিবারণ করছে পাবনার সাঁথিয়াবাসী। শীতের তীব্রতা অনেকাংশই বেশি এখানে। এছাড়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির...

মেধাবি সিয়ামের পড়ালেখার দায়িত্ব নিলেন মানবিক এমপি জয়

মানবতায় এগিয়ে আসলেন সিরাজগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য ও উত্তরবঙ্গের কৃতি সন্তান প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়। এসএসসি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগ থেকে রাজশাহী বোর্ডে প্রথম...

বঙ্গবন্ধুকে ফিরে না পেলে স্বাধীনতা পূর্ণতা পেতো না : মেয়র তাপস

বার্তা সরণি প্রতিবেদক:ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি ১৯৭২ সালের ১০...

নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বন্দর উপজেলা আর বিচ্ছিন্ন হয়ে রইল না। দুই জনপদকে আলাদা করে রাখা নদীর ওপর সাড়ে সাত বছরের নির্মাণযজ্ঞ শেষ করে এখন সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করলো তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, যেটির নামকরণ করা হয়েছে সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের নামে। দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষে আজ স্বপ্নের দ্বার খুললো নারায়ণগঞ্জের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার দুপুর ১২টায় তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতু উদ্বোধন করেন। ফলে নৌকা ও ট্রলারে করে নদী পারাপার হওয়ার ভোগান্তি থাকছে না দুই পারের মানুষের।

সেতুপারের বন্দর ফরাজিকান্দা অংশে প্রস্তুত করা হয় মঞ্চ। সেখানে বড় পর্দায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুর অপর পার নারায়ণগঞ্জের অংশকেও সাজানো হয়েছে নানাভাবে।

বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কুদরতে খুদা বলেন, ‘প্রতিদিন নৌকা ও ট্রলারে শহরে আসা-যাওয়া করতে এ অঞ্চলের মানুষের যেমনি ভোগান্তি পোহাতে হয়, তেমনি মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে। তাই সেতুটি উদ্বোধনে উচ্ছ্বসিত বন্দর উপজেলার প্রতিটি মানুষ।’

উপজেলার সাবদি এলাকার বাসিন্দা রুপালী আক্তার বলেন, ‘ভোর থেকে রাত পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা নদীতে অসংখ্য কার্গো জাহাজ, বাল্কহেডসহ নৌযান চলাচল করে। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার হতে হয় যাত্রীদের। প্রায় সময় ঘটে দুর্ঘটনা। ঝুঁকির কারণে নারীরা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে নদী পার হতে চান না। কারণ অনেক ভয় লাগে নদীতে। সেতু হওয়ায় যেমনি ভয় কেটেছে তেমনি পথ সহজ হয়েছে।’

বাগবাড়ী এলাকার বাসিন্দা নাহিন আলম পলক বলেন, ‘বন্দরের মদনগঞ্জ ঘাট থেকে নবীগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত আটটি খেয়া পারাপারের ঘাট রয়েছে। এসব ঘাট দিয়ে সবচেয়ে বেশি পারাপার হন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। সময় বাঁচাতে বেশির ভাগ সময় ঝুঁকি নেন ট্রলারে। সেতু হওয়ার ফলে এখন যানবাহনে করে সহজে সরাসরি নারায়ণগঞ্জে কাজে যেতে পারবে। তিনি বলেন, ‘সব চেয়ে বেশি উপকার হবে রোগীদের। সেতু হওয়ার কারণে দীর্ঘদিনের কষ্ট শেষ হচ্ছে। এটা অনেক আনন্দেন। আমাদের বন্দরবাসীর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’

নারায়ণগঞ্জ পাড়ের নিতাইগঞ্জের শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘ব্রিজ হওয়ার কারণে যাতায়াত সহজ হয়ে গেল। সেতু ব্যবহার করে কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিভিন্ন এলাকার দিকে যেতে সহজ হবে। কাঁচামালসহ বিভিন্ন পাইকারি পণ্য আনা নেয়ায় সময় বাঁচবে।’

সেতুর প্রকল্প পরিচালক শোয়েব আহমেদ জানান, সৌদি আরবের সহযোগিতা নিয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছে সরকার। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ৩৮টি খুঁটি। এর মধ্যে নদীতে রয়েছে পাঁচটি। তিনি বলেন, ‘এখন নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরের মধ্যে সরাসরি সংযোগ হলো। পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট-মহাসড়কে অল্প সময়ে যাতায়াত করা যাবে।’

২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বন্দরের মদনগঞ্জ ও সদরের সৈয়দপুর এলাকায় সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। ১ হাজার ২৩৪ দশমিক ৫০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬০৮ কোটি টাকা ৫৬ লাখ টাকা। ৬ লেনের এই সেতুর চার লেনে দ্রুতগতির যানবাহন এবং দুই লেনে চলবে রিকশা সাইকেল ভ্যানসহ ধীরগতির যানবাহন। দুই পাশের রেলিং ঘেঁষে রয়েছে ফুটপাত। তাই পাড়ি দেয়া যাবে হেঁটেও। এই সেতুর নির্মাণের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের সঙ্গে পদ্মা সেতুর দূরত্ব কমল ৯ কিলোমিটার। বন্দর উপজেলার মদনপুর দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর হয়ে শ্রীনগরের ছনবাড়ী পয়েন্টে দিয়ে যুক্ত হবে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা সুপার এক্সপ্রেসওয়ে।