ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর পৃথিবীতে আগমন এবং বিদায়ের দিনটি স্মরণে রাজধানীসহ সারাদেশে শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজনে ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হচ্ছে রোববার দিনটি ঘিরে দেশের বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ ১৫ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিবস পালনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং টেলিভিশনে অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারিত হচ্ছে।
হিজরি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.)। তার শাহাদৎ বার্ষিকীও একই দিনে। হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এ দিনটিকেই ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করে থাকেন বাংলাদেশের মানুষ। সরকারি ছুটিও থাকে এদিন। শনিবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ১৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে মাসব্যাপী ইসলামি বইমেলারও উদ্বোধন করেন তিনি। এদিন এশার নামাজের পর রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে ঈদে মিলান্নবী উপলক্ষে ওয়াজ মাহফিল, দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রোববার ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে কোরআনখানি, দোয়া মাহফিল, ১৫ দিনব্যাপী ওয়াজের অনুষ্ঠান। ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় সেমিনার, ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, কিরাত মাহফিল, হামদ-নাত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুলে নৈতিকতা ও চরিত্র গঠনবিষয়ক সেমিনার ও বিশেষ স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে।
এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫০টি ইসলামিক মিশন ও সাতটি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গুলিস্তান কাজী বশির মিলনায়তন (মহানগর নাট্যমঞ্চ) প্রাঙ্গণে ‘আশেকানে রহমানিয়া মইনিয়া সহীদিয়া মাইজভাণ্ডারিয়ার’ ব্যবস্থাপনায় জশনে জুলুস ও সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। তাদের অনুষ্ঠানের মধ্যে সকালে আলোচনা সভা, দুপুরে শোভাযাত্রা ও জোহরের নামাজ শেষে মোনাজাত।
শ্রেষ্ঠ নবী মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীতে ঈদে মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (০৯ অক্টোবর) ১২ ই রবিউল আউয়াল উপলক্ষে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের বর্তমান ইমাম হযরত শাহসুফী সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল-হাসানীর (মা.জি.আ.) নেতৃত্বে লাখো নবীপ্রেমী জনতার উচ্ছ্বাসমুখর অংশগ্রহণে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজধানীতে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে জশনে জুলুস বের হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হতে জশনে জুলুস (ধর্মীয় শোভাযাত্রা) শুরু হয়ে রাজধানীর শাহবাগ, মৎস ভবন, দোয়েল চত্বর হয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের সড়ক প্রদক্ষিণ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশে মিলিত হয়।
ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) চেতনা, তাৎপর্য ধারণ ও লালনের মধ্য দিয়েই বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। শোভাযাত্রার অগ্রভাগেই দৃষ্টিনন্দন বড় বড় হরফে লেখা ছিল ‘ইয়া নবী ছালামু আলাইকা’, ‘ইয়া রাসূল ছালামু আলাইকা’।
আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়ার ব্যবস্থাপনায় জশনে জুলুসে অংশগ্রহণকারীরা কলেমা খচিত পতাকা, প্লেকার্ড, ফেস্টুন ছাড়াও, বহন করে বাংলাদেশের বিশাল জাতীয় পতাকা।
জুলুসে অংশগ্রহণকারীরা নারায়ে তকবির, নারায়ে রেসালতের স্লোগানে স্লোগানে রাজধানীর রাজপথ মুখরিত করে তোলে। দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে জুলুসে আসা সূফিবাদী জনতা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ছিল। তাদের আনন্দ উচ্ছ্বাস ঈদের আনন্দকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। জুলুস শেষে মুসলিম জনতা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশে মিলিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন হুজুর কেবলা সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী।তিনি বলেছেন, মহানবীর (সা.) দুনিয়ায় শুভাগমন জগৎবাসীর জন্য আল্লাহ পাকের বিশেষ রহমত ও অনুগ্রহ। প্রিয়নবীর (সা.) শুভাগমন না হলে সৃষ্টি জগৎ অস্তিত্বই লাভ করতো না। রাসূল (সা.) দুনিয়ায় শুভাগমনের মূল উদ্দেশ্যই হলো একটি শান্তি ও সহাবস্থানপূর্ণ মানবিক বিশ্ব সমাজ গড়ে তোলা। আজ সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিয়ানমারসহ তাবৎ দুনিয়ায় যুদ্ধ সংঘাত ও রক্তপাতে জর্জরিত। শক্তিধর দেশগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না করে অস্ত্রের ভাষায় কথা বলছে। নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ খাদ্য জ্বালানি সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। এই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে মহানবীর (সা.) আদর্শ অনুসরণের বিকল্প নেই। মদিনার সনদের আলোকে কীভাবে সমতাভিত্তিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক আধুনিক কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠন করা যায় সাড়ে চৌদ্দশত বৎসর আগে রাসূলই আমাদেরকে দেখিয়েছেন। শাহসূফী সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী বলেন, প্রিয়নবী (সা.) ছিলেন পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র নায়ক।
পীরজাদা মুফতী মাওলানা বাকী বিল্লাহ আল আযহারী, মুফতী মাওলানা এইচএম মাকসুদুর রহমানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ১৪ দলীয় সমন্বয়ক ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু (এমপি)।
উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, অ্যাড. নূরুল আমিন রুহুল, মইনীয়া যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহজাদা সাইয়্যিদ মেহবুব-এ-মইনুদ্দীন আল-হাসানী, কার্যকরী সভাপতি শাহজাদা সাইয়্যিদ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন আল-হাসানী, আমেরিকা থেকে আসা আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলার ড. শেখ আহমদ তিজানি বিন ওমর, মরক্কো থেকে মো. লাকদার দারফুফি, তুরস্ক থেকে সাইয়্যিদি মোহাম্মদ ইএল হোসাইনী, অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম প্রমুখ।
৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে আরবের মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। ৬৩ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।