মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৪

  ঢাকা, বাংলাদেশ  |  আজকের পত্রিকা  |  ই-পেপার  |  আর্কাইভ   |  কনভার্টার  |   অ্যাপস  |  বেটা ভার্সন

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৪

  |  ঢাকা, বাংলাদেশ  |  আজকের পত্রিকা  |  ই-পেপার  |  আর্কাইভ   |   কনভার্টার  |   অ্যাপস  |  বেটা ভার্সন

spot_img

জেলা পরিষদে অগ্রাধিকার পাবেন জনপ্রিয় নেতারা

বিদ্রোহীরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন না

জনদর্পণ প্রতিবেদন

বার্তা সরণি প্রতিবেদন

| অনলাইন সংস্করণ

আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য ৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের পাশাপাশি দলের জেলা-উপজেলা ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা দলীয় মনোনয়নের আশায় রীতিমতো মুখিয়ে আছেন। ৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র ক্রয় করে জমা দিয়েছেন ৫০০ নেতা। জানা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন না। শনিবার বিকেল চারটায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার জনপ্রনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভা ডাকা হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানেই জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দল সমর্থিত একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছে আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়ী ১১ জেলা পরিষদের প্রশাসকের নাম ওই তালিকায় রাখা হয়নি। তালিকায় কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক এমপির পাশাপাশি দুজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ জেলা পর্যায়ে সব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য, সৎ এবং দক্ষ নেতার নাম রয়েছে। মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন জনপ্রিয় নেতারা। এর আগে রোববার সকাল ১০টায় দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ফরম বিক্রি শুর হয়। প্রথম দিন ১৪৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার কাজ চলে। এসময় আগ্রহী প্রার্থীদের নিজ নিজ কর্মী-সমর্থক নিয়ে শোডাউন দিতে দেখা গেছে তাদের। এ সময় স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পার্টি অফিস ও আশেপাশের এলাকা।
জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হলেও আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত তারা। ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি চালাচ্ছেন জোর লবিংও। মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য, বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধারনা দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা জানিয়েছেন, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক এমপিদের দলের মনোনয়ন না দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে বাদ পড়বেন গত নির্বাচনে বিজয়ী দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তাছাড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে নানা কারণে বিতর্কিত নেতাদের মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সব মিলিয়ে চেয়ারম্যান পদে এবার নতুন মুখের ছড়াছড়ি হবে।
সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এই নির্বাচনের ভোটার। তাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ নেতা। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যরা তাঁদের ভোটেই নির্বাচিত হবেন। এ কারণে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই হবেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী।

চুয়াডাঙ্গায় সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ ও দামুড়হুদা উপজেলা শাখার সভাপতি মাহফুজুর রহমান মঞ্জু। স্থানীয়ভাবে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান প্রশাসক শেখ শামসুল আবেদীন খোকন ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। এর মধ্যে শেখ শামসুল আবেদীন খোকন গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করেন। এ জন্য দলের সংক্ষিপ্ত তালিকায় তার নাম রাখা হয়নি।
মেহেরপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এসএম ইবরাহীম শাহীনের নাম সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছে। বর্তমান প্রশাসক গোলাম রসুল গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করেন। সংক্ষিপ্ত তালিকায় তার নাম নেই। তবে তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়াও জেলার সহসভাপতি আব্দুল মান্নান ও মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য শামীম আরা হীরা সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন।
ঝিনাইদহে প্রশাসক কনক কান্তি দাসের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দার। এছাড়া স্থানীয়ভাবে আলোচনায় রয়েছেন জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান, দুই সহসভাপতি মকবুল হোসেন, আব্দুস সামাদ, দুই সাংগঠনিক সম্পাদক মাহামুদুল ইসলাম ফোটন, অশোক ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, শৈলকুপা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবেদ আলী এবং বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ড. এম হারুন অর রশীদ।
কুষ্টিয়ায় প্রশাসক রবিউল ইসলাম, খোকশা উপজেলা চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলীর নাম সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় আলোচনায় রয়েছেন জেলার সহসভাপতি জাহিদ হোসেন জাফর। এ জেলায় নির্বাচনে লড়বেন জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন।
নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে উৎসাহের কমতি নেই। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক পরিচিতি তুলে ধরছেন। দলীয় মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। ‘মনোনয়ন পেলে জয় অনেকটাই সম্ভব’ এ আশায় দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। ভোটারদের সঙ্গে সখ্য আরও প্রগাঢ় করছেন। তবে দলের মনোনয়ন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার আগাম পস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ।

এদিকে কয়েকটি জেলায় বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জাপা), জাসদ এবং বাংলাদেশ জাসদের প্রার্থীরাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত হলে পঞ্চগড় পৌর বিএনপির সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম ও দলের তেঁতুলিয়া উপজেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব রেজাউল করিম শাহীন নির্বাচনী যুদ্ধে নামবেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও জেলা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আতাউর রহমান নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি গাইবান্ধার বর্তমান প্রশাসক। গত নির্বাচনে জয় পান আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে। চট্টগ্রামে মহানগর জাতীয় পার্টির (জাপা) সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব হোসেনকে প্রার্থী করানোর চেষ্টা চলছে। কুষ্টিয়ায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন। বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আল আমিন পঞ্চগড়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
২০১১ সালের ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ সচল হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরেই মন্ত্রী কিংবা এমপি হতে পারেননি, আওয়ামী লীগের এমন জ্যেষ্ঠ নেতারা জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান। তারা প্রায় পাঁচ বছর ওই দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচিত চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পায়।
আগামী ১৭ অক্টোবর ৬১টি জেলা পরিষদের দ্বিতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) পদ্ধতিতে সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রায় ৬৩ হাজারেরও বেশি জনপ্রতিনিধি ভোট দেবেন। এর আগে নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীরা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা এবং ২৫ সেপ্টেম্বর প্রত্যাহার করতে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

শীত বস্ত্র বিতরণ করলো মোহাম্মদ নাসিম ফাউন্ডেশন

বার্তা সরণি প্রতিবেদক:প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের সাহায্যে শীত নিবারণ করছে পাবনার...

মেধাবি সিয়ামের পড়ালেখার দায়িত্ব নিলেন মানবিক এমপি জয়

মানবতায় এগিয়ে আসলেন সিরাজগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য ও উত্তরবঙ্গের কৃতি সন্তান প্রকৌশলী তানভীর...

বঙ্গবন্ধুকে ফিরে না পেলে স্বাধীনতা পূর্ণতা পেতো না : মেয়র তাপস

বার্তা সরণি প্রতিবেদক:ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন,...

আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য ৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের পাশাপাশি দলের জেলা-উপজেলা ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা দলীয় মনোনয়নের আশায় রীতিমতো মুখিয়ে আছেন। ৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র ক্রয় করে জমা দিয়েছেন ৫০০ নেতা। জানা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন না। শনিবার বিকেল চারটায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার জনপ্রনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভা ডাকা হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানেই জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দল সমর্থিত একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছে আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়ী ১১ জেলা পরিষদের প্রশাসকের নাম ওই তালিকায় রাখা হয়নি। তালিকায় কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক এমপির পাশাপাশি দুজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ জেলা পর্যায়ে সব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য, সৎ এবং দক্ষ নেতার নাম রয়েছে। মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন জনপ্রিয় নেতারা। এর আগে রোববার সকাল ১০টায় দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ফরম বিক্রি শুর হয়। প্রথম দিন ১৪৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার কাজ চলে। এসময় আগ্রহী প্রার্থীদের নিজ নিজ কর্মী-সমর্থক নিয়ে শোডাউন দিতে দেখা গেছে তাদের। এ সময় স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পার্টি অফিস ও আশেপাশের এলাকা।
জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হলেও আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত তারা। ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি চালাচ্ছেন জোর লবিংও। মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য, বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধারনা দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা জানিয়েছেন, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক এমপিদের দলের মনোনয়ন না দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে বাদ পড়বেন গত নির্বাচনে বিজয়ী দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তাছাড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে নানা কারণে বিতর্কিত নেতাদের মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সব মিলিয়ে চেয়ারম্যান পদে এবার নতুন মুখের ছড়াছড়ি হবে।
সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এই নির্বাচনের ভোটার। তাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ নেতা। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যরা তাঁদের ভোটেই নির্বাচিত হবেন। এ কারণে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই হবেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী।

চুয়াডাঙ্গায় সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ ও দামুড়হুদা উপজেলা শাখার সভাপতি মাহফুজুর রহমান মঞ্জু। স্থানীয়ভাবে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান প্রশাসক শেখ শামসুল আবেদীন খোকন ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। এর মধ্যে শেখ শামসুল আবেদীন খোকন গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করেন। এ জন্য দলের সংক্ষিপ্ত তালিকায় তার নাম রাখা হয়নি।
মেহেরপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এসএম ইবরাহীম শাহীনের নাম সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছে। বর্তমান প্রশাসক গোলাম রসুল গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করেন। সংক্ষিপ্ত তালিকায় তার নাম নেই। তবে তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়াও জেলার সহসভাপতি আব্দুল মান্নান ও মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য শামীম আরা হীরা সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন।
ঝিনাইদহে প্রশাসক কনক কান্তি দাসের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দার। এছাড়া স্থানীয়ভাবে আলোচনায় রয়েছেন জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান, দুই সহসভাপতি মকবুল হোসেন, আব্দুস সামাদ, দুই সাংগঠনিক সম্পাদক মাহামুদুল ইসলাম ফোটন, অশোক ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, শৈলকুপা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবেদ আলী এবং বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ড. এম হারুন অর রশীদ।
কুষ্টিয়ায় প্রশাসক রবিউল ইসলাম, খোকশা উপজেলা চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলীর নাম সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় আলোচনায় রয়েছেন জেলার সহসভাপতি জাহিদ হোসেন জাফর। এ জেলায় নির্বাচনে লড়বেন জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন।
নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে উৎসাহের কমতি নেই। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক পরিচিতি তুলে ধরছেন। দলীয় মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। ‘মনোনয়ন পেলে জয় অনেকটাই সম্ভব’ এ আশায় দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। ভোটারদের সঙ্গে সখ্য আরও প্রগাঢ় করছেন। তবে দলের মনোনয়ন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার আগাম পস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ।

এদিকে কয়েকটি জেলায় বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জাপা), জাসদ এবং বাংলাদেশ জাসদের প্রার্থীরাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত হলে পঞ্চগড় পৌর বিএনপির সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম ও দলের তেঁতুলিয়া উপজেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব রেজাউল করিম শাহীন নির্বাচনী যুদ্ধে নামবেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও জেলা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আতাউর রহমান নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি গাইবান্ধার বর্তমান প্রশাসক। গত নির্বাচনে জয় পান আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে। চট্টগ্রামে মহানগর জাতীয় পার্টির (জাপা) সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব হোসেনকে প্রার্থী করানোর চেষ্টা চলছে। কুষ্টিয়ায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন। বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আল আমিন পঞ্চগড়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
২০১১ সালের ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ সচল হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরেই মন্ত্রী কিংবা এমপি হতে পারেননি, আওয়ামী লীগের এমন জ্যেষ্ঠ নেতারা জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান। তারা প্রায় পাঁচ বছর ওই দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচিত চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পায়।
আগামী ১৭ অক্টোবর ৬১টি জেলা পরিষদের দ্বিতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) পদ্ধতিতে সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রায় ৬৩ হাজারেরও বেশি জনপ্রতিনিধি ভোট দেবেন। এর আগে নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীরা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা এবং ২৫ সেপ্টেম্বর প্রত্যাহার করতে পারবেন।