আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য ৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে আজ শনিবার সন্ধ্যায়। আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র কিনেছেন ৫০০ জন। গড়ে প্রতিটি জেলায় আটজনের অধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী ফরম কিনেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, এমপি, জেলা-উপজেলার শীর্ষ নেতা এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে না থাকায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের আশায় রীতিমতো মুখিয়ে আছেন তারা। ফাঁকা মাঠে গোল দিতেই প্রার্থীর এতটা ছড়াছড়ি। এছাড়া এই নির্বাচনে যারা ভোটার, স্থানীয় সরকারের সেই জনপ্রতিনিধিদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের। ফলে ‘দলীয় সমর্থন পেলেই জয় নিশ্চিত’ এমনটা ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সব মিলিয়ে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হলেও দলের সমর্থনই মুখ্য হয়ে উঠেছে। এ নিয়েই চলছে দৌড়ঝাঁপ। আজ শনিবার বিকাল ৪টায় গণভবনে দলের সংসদীয় এবং স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভা ডাকা হয়েছে। সেখানেই চূড়ান্ত করা হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, আজ শনিবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা। সেখানেই প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। প্রার্থী যতই থাক, অবশ্যই ভালো প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। ত্যাগী, যোগ্য ও দলের জন্য নিবেদিত নেতাদেরই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যাটা খুবই বেশি হয়ে গেছে। আসলে সবাই নিজেদের জনপ্রিয় মনে করেন। যদিও গণতান্ত্রিক রীতিতে এটাই স্বাভাবিক। তবে যাচাই-বাছাই করে সিনিয়র, অভিজ্ঞ, দলের নীতি-আদের্শর প্রতি খুবই অবিচল ও নিবেদিত এমন ব্যক্তিদেরই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।
জনকল্যাণ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রয়েছে এমন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদেরও দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে। একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, এই মুহূর্তে জনপ্রিয়, এমন প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। কারণ রাজনীতিতে সব সময় এক রকম জনপ্রিয়তা থাকে না। এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন রিপোর্ট যখন আমরা দেখি তখন ধারণা পাই।
তাছাড়া আওয়ামী লীগের বিশাল সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক আছে। সুতরাং প্রতিটি জেলাতেই আমরা জানি কারা আছে, কারা আবার হতে চায়। সুতরাং কে বেশি জনপ্রিয়, কাকে দিলে সবাই খুশি হবে, সহজভাবে মেনে নেবে-এসব তথ্য বিবেচনা করেই দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
এদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জাপা), ইসলামী বা বামদলগুলোর কেন্দ্রীয়ভাবে তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না। তবে দু-একটি জেলায় বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জাপা), জাসদ এবং বাংলাদেশ জাসদের নেতারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থিতা জানানও দিচ্ছেন তারা। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে দলগুলোতে সেই ব্যস্ততা নেই।
অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এই নির্বাচনের ভোটার। তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ নেতা। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যরা তাদের ভোটেই নির্বাচিত হবেন। এ কারণে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই হবেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী।
মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বেশ কয়েকজন জানান, বর্তমান সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। আসন্ন এ নির্বাচনে যেসব জনপ্রতিনিধি ভোটার, তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের লোকজন। যার কারণে দলীয় সমর্থন পেলে এবং বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলে চেয়ারম্যান হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এজন্য দলের মনোনয়ন পাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন তারা। অন্যদিকে যেহেতু এই নির্বাচনে অন্য প্রতিপক্ষ নেই তাই দলীয় মনোনয়ন না পেলেও অনেকেই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনি মাঠে থেকে যাওয়ার ঘোষণাও দিতে পারেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। এতবড় একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন। এখানে প্রতিটি জেলায় ৭-৮ জন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকবেন এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আওয়ামী লীগের অনেক যোগ্য লোক আছেন। তবে দলীয় মনোনয়ন বোর্ড যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ও ত্যাগীদেরই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেবে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, ৬১টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের জন্য দলের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকাটি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে। মূলত এই তালিকা থেকেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হবে। এছাড়া বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসকদের মধ্যে যাদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে তাদের একটি তালিকা এখন প্রধানমন্ত্রী হাতে রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক রিপোর্ট ও বিভিন্ন সংস্থার জরিপও রয়েছে। সব কিছু বিবেচনা করেই দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ।
এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে জেলায় জেলায় চলছে নানা সমীকরণ। নেতারা মনোনয়ন ফরম কিনে দেখা করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা এবং মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে। তুলে ধরছেন নিজেদের ত্যাগ-তিতিক্ষার ফিরিস্তি। দলীয় প্রধানের কাছেও আলাদা করে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকাসহ জীবনবৃত্তান্ত ও ইতিবাচক কর্মকাণ্ড পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।
কেন্দ্রে যোগাযোগের পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা ভোটারদের সঙ্গেও সখ্য বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। জেলার শীর্ষ নেতা এবং এমপি-মন্ত্রীরাও নিজেদের আগামী দিনের রাজনীতির হিসাব মেলাচ্ছেন। যেসব জেলার শীর্ষ নেতা বর্তমানে এমপি তাদের কেউ কেউ নিজের পছন্দের প্রার্থীর জন্য করেছেন সুপারিশ। কিছু কিছু জায়গা থেকে কেউ কেউ নির্বাচন উন্মুক্ত রাখারও দাবি জানিয়েছেন।
গত ২৩ আগস্ট নির্বাচন কমিশন তিন পার্বত্য জেলা বাদ দিয়ে ৬১ জেলা পরিষদে ভোটের তফসিল ঘোষণা করে। এতে সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত ৬৩ হাজারের বেশি জনপ্রতিনিধি ভোট দেবেন। তফসিল অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৮ সেপ্টেম্বর বাছাইয়ের পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর।