সাতক্ষীরা ও চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে সাত ঘণ্টার ব্যবধানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সীমান্তে পাওয়া গেছে। অপরজনের লাশ বিএসএফ নিয়ে গেছে। নিহত দুই যুবক হলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কুশখালি গ্রামের মক্তব মোড়ের হায়দার আলীর ছেলে হাসানুজ্জামান (২৫) এবং মোনতাজ আলী (৪০) চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা ছোট বলদিয়া গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে।
রবিবার ভোর ৩টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালী সীমান্তের খইতলা এলাকায় হাসানুজ্জামানকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। পরিবারের দাবি, তাকে বিএসএফ সদস্যরা গুলি করে ফেলে রেখে গেছে। নিহতের বাবা হায়দার আলী জানান, শনিবার রাত ১০টার দিকে হাসানুজ্জামান তার কাছে কিছু টাকা চান। ‘টাকা নেই’, বললে হাসানুজ্জামান পাশের বাজারে চায়ের দোকানে যাচ্ছে জানিয়ে চলে যায়। তবে গভীর রাতেও সে আর বাসায় ফেরেনি। ভোর ৫টার দিকে স্থানীয় একজন মোবাইলে কল করে জানান, তার ছেলেকে খৈতলা সীমান্তের শূন্যরেখায় ভারতের দুবলী ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা গুলি করে ফেলে রেখে গেছে।
স্থানীয়রা হাসানুজ্জামানকে উদ্ধার করে রবিবার ভোর ৬টা ১০ মিনিটে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার পথে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ডুমুরিয়া এলাকায় হাসান মারা যান। নিহত হাসানুজ্জামান বিবাহিত, তার পাঁচ মাস বয়সী একটি সন্তানও আছে। তার শ্বশুর সদর উপজেলার ঘোনা মোল্লাপাড়ার সাইফুল ইসলাম জানান, তার জামাই ভারতীয় চোরাই পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য ‘পাসিংম্যান’ হিসেবে কাজ করতেন। এক সপ্তাহ আগে তাকে পুলিশে ধরার পর ছেড়েও দিয়েছিল। শনিবার রাতে হাসান ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আনার জন্য পাসিংম্যানের দায়িত্ব পালন করতে সীমান্তে অবস্থান করছিলেন। দুবলী ক্যাম্পের বিএসএফ তাকে গুলি করেছে বলে তিনি জেনেছেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশরাফুল ইসলাম জানান, হাসানের পেটের ডান দিকে গুলিবিদ্ধ হন। খুলনায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরা-৩৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আল মাহমুদ জানান, সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসানের মৃত্যুর ব্যপারে বিএসএফের কাছে জানতে চাইলে তারা অস্বীকার করেছে। এ বিষয়ে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাটালিয়ান পর্যায়ে পতাকা বৈঠক কিছুক্ষণ পর কালিয়ানি শূন্যরেখায় শুরু হবে। নিহত হাসান অবৈধপথে আনা ভারতীয় পণ্য পাসিংয়ের কাজ করতেন বলে এই বিজিবি কর্মকর্তাও নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে শনিবার দিবাগত গভীর রাতে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্তের ছোটবলদিয়ায় ‘বিএসএফের গুলিতে’ মোনতাজ আলীও নিহত হন। রবিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অধিনায়ক শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় পারকৃষ্টপুর-মদনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম জাকারিয়া জানান, শনিবার দিবাগত রাতে মোনতাজসহ ৫-৬ জন বাংলাদেশি মহিষ আনতে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। রাত দেড়টার দিকে তারা মহিষ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিলেন। সে সময় সীমান্তের ৮৩নং মেইন পিলারের কাছে ভারতের মোকামতলা বিএসএফের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে মোনতাজ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অন্যরা পালিয়ে আসেন। রবিবার সকাল ১০টায় নিহতের লাশ বিএসএফ সদস্যরা উদ্ধার করে নিয়ে গেছেন।