এক মাস কারাবন্দি থাকার পর উচ্চ আদালতের জামিনে মুক্ত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সোমবার বিকাল ৫টা ৫৫মিনিটে কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দলটির এ শীর্ষ দুই নেতা বেরিয়ে আসেন। গত ৮ ডিসেম্বর তাদের ঢাকার বাসা থেকে আটক করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ।
এদিন জামিনে তাদের ছাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বিকাল থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে ভিড় করেন। দুই নেতা বেরিয়ে এলে করতালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানান তারা। সেখানে বিভিন্ন স্লোগানও দিতে দেখা যায় তাদের। এরপর ফখরুল আলাদা গাড়িতে করে এবং মির্জা আব্বাস তার সহধর্মিনী আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে আলাদা গাড়িতে করে কারাফটক ছাড়েন।
গত ৮ ডিসেম্বর নাশকতার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর পর থেকে জামিনের প্রক্রিয়া শুরু করেন আইনজীবীরা। এক মাস ধরে নিম্ন আদালত পেরিয়ে হাই কোর্টে জামিনের আবেদন উঠলে আদালত তাদের ছয় মাসের জন্য জামিনের আদেশ দেয়। এরপর গত রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাইকোর্টের দেওয়া ছয় মাসের জামিন আদেশ বহাল রাখে। এতে ফখরুল ও আব্বাসের কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পথ খুলে যায়।
এর আগে সবশেষ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ২০১৫ সালে প্রায় নয় মাস কারাগারে আটক ছিলেন। সেসময় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি।অপরদিকে ২০১৪ সালে আদালতে হাজিরা দিতে গেলে মির্জা আব্বাসের জামিন নাচক করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে ১৮ দিন পর উচ্চ আদালতের জামিনে তিনি ছাড়া পেয়েছিলেন।
এবারের মামলায় নিম্ন আদালত জামিন না দিলে উচ্চ আদালতে যান বিএনপির দুই নেতার আইনজীবীরা। গত ৫ জানুয়ারি হাই কোর্টের বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দীন খানের বেঞ্চ তাদের ছয় মাসের জামিন দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি জানালে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাই কোর্টের দেওয়া আদেশই বহাল রাখে। হাই কোর্টে জামিন পেলেন ফখরুল ও আব্বাস ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের তিন দিন আগে নয়া পল্টনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর ভোর রাতে উত্তরার বাসা থেকে মির্জা ফখরুল এবং শাহজাহানপুরের বাসা থেকে মির্জা আব্বাসকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।পরদিন ৮ ডিসেম্বর নাশকতার একটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। সেদিন আদালত জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠায়।
ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ও স্থান নির্ধারণ নিয়ে উৎকন্ঠা-উত্তেজনার মধ্যে গত ৭ ডিসেম্বর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জমায়েত হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। তখন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ। কার্যালয় থেকে গেপ্তার করা হয় কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাসহ কয়েকশ নেতাকর্মীকে। শাহজাহানপুর ও রমনা থানায় চারটি মামলা করে পুলিশ। সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয় এসব মামলায়। তাদের মধ্যে ৭২৫ জনের নাম মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এ তালিকায় মির্জা ফখরুল বা মির্জা আব্বাসের নাম ছিল না।
সোমবার বিকালে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তির সময়ে মির্জা আব্বাসের সহধর্মিনী আফরোজা আব্বাস, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, মীর নেওয়াজ আলী, শামীমুর রহমান শামীম, এসএম জাহাঙ্গীর, ফরহাদ হোসেন আজাদ, রিয়াজুল হান্নান, আনোয়ার হোসাইন, শায়রুল কবির খান, ইউনুস আলীসহ কিছু নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।