আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এই কর্মপরিকল্পনায় ১৪টি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে-নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন, ইলেকট্রনিং ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ওপর আস্থা সৃষ্টি, নির্বাচনি প্রচারে প্রার্থীদের বাধার সম্মুখীন না হওয়া, সব রাজনৈতিক দলের আচরণবিধিমালা মেনে চলা প্রভৃতি।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় ১৯টি উত্তরণের উপায় উল্লেখ করা হয়েছে কর্মপরিকল্পনায়। আরও রয়েছে সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, সমর্থক ও সংশ্লিষ্টদের দায়দায়িত্বের কথা। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অধিকাংশ ব্যক্তি যেসব সুপারিশ করেছেন তা বাস্তবায়ন, সব রাজনৈতিক দল যাতে নির্বিঘ্নে প্রচার করতে পারে, সে বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো প্রভৃতি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
তবে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই কর্মপরিকল্পনায়। বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কর্মপরিকল্পনায়। সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের কথা জানিয়ে এর পক্ষে বিভিন্ন ধরনের যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া সীমানা পুনঃনির্ধারণসহ ৭টি কার্যক্রম কখন সম্পন্ন করা হবে সেই সময়সূচি উল্লেখ করা হয়েছে কর্মপরিকল্পনায়।
কর্মপরিকল্পনা প্রকাশকালে নির্বাচন কমিশন মো. আলমগীর বলেছেন, কারও বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অনীহা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হলে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি এমন কথাও বলেছেন, কমিশনাররা যদি দেখেন তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না, তাহলে সেই মুহূর্ত থেকে তারা দায়িত্ব পালন করবেন না।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন যে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে, সেটাকে ইতিবাচক বলা যায়। বস্তুত, নির্বাচন কমিশনের কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ হলো আগামী নির্বাচন। তবে যদি কর্মপরিকল্পনায় উল্লিখিত বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব।
আমরা মনে করি, গত দুটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দল ও জনগণের বৃহৎ অংশের মধ্যে আস্থার যে সংকট তৈরি হয়েছে, আলোচ্য কর্মপরিকল্পনা সেই সংকট দূর করতে অনেকটাই ভূমিকা রাখতে পারবে।
তবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কর্মপরিকল্পনা তৈরি করাই যথেষ্ট নয়, এর বাস্তবায়নই মূল কথা। আগামী নির্বাচনসংক্রান্ত একটি বড় চ্যালেঞ্জের কথা অবশ্য কর্মপরিকল্পনায় নেই। দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বলছে, দলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না। তাদের এই সিদ্ধান্ত একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে বড় বাধা।
এই বাধা কীভাবে অতিক্রম করা যায়, সরকার ও নির্বাচন কমিশন উভয়কেই তা নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা শুধু একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই না, চাই একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনও। সেটা কীভাবে সম্ভব, সেই পথ উদ্ভাবন করতে হবে সম্মিলিতভাবে।